স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ শাখার নৈশ প্রহরী রাজেশ বিশ্বাস-(২৩) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। রাজেশকে খুন করে ব্যাংক লুট করার চেষ্টার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে নিজেদের দোষ ও হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জাবানবন্দি দেন।
বুধবার বেলা ১১টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের এই তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রামের রসু মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন, একই উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মোঃ জামিল-(২৮) ও রহিম বাদশার ছেলে সাদ্দাম হোসেন-(২৭) এবং চর-চারতলা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মাসুম কবির- (৩৮)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আশুগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ মোবাশ্বের হোসেনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, তার ব্যাংকের ভেতরে দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী রাজেশ বিশ্বাসকে অনেক ডাকাডাকির পরও তার কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ রাতে ব্যাংকের প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ফ্লোরে রাজেশ বিশ্বাসের লাশ দেখতে পায়। রাজেশ সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার চান্দপুর গ্রামের ক্ষিরোদ বিশ্বাসের ছেলে।
পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনার পর দিন (২৭ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ মোবাশ্বের হোসেন বাদি হয়ে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, লোহার র্যাঞ্জ ও শাবল দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রাজেশকে হত্যা করা হয়। মূলত ব্যাংক লুট করার জন্যই এই হত্যাকান্ড। হত্যকান্ডের ‘মূল হোতা’ জামাল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘বড় কাজ’ করার জন্য ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করছিল। সেজন্য বিডিবিএল, সোনালী ব্যাংক এবং
প্রিমিয়ার ব্যাংকের আশুগঞ্জ শাখায় লুট করার জন্য খেঁাজ-খবর নিতে থাকে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকটি বাজারে হওয়ায় এবং সব সময় লোকজনের আনাগোনা থাকায় সেখানে লুটের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। প্রিমিয়ার ব্যাংকের চারদিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকায় সেখানেও লুটের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তাদের।
তিনি বলেন, বিডিবিএল ব্যাংকের একটি জানালা অরক্ষিত এবং পেছন দিকে চলাচলের ব্যবস্থা থাকায় তারা লুটের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী জামাল ও জামিল জানালার গ্রিল কাটে। মোস্তাক ও শাহাদাৎ নামে দুইজন রাস্তায় পাহারা দেয় এবং লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করে। জামাল ও জামিল ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে নৈশপ্রহরী রাজেশকে লোহার র্যাঞ্জ ও শাবল দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে হত্যা করে। এরপর তারা ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং একটি ল্যাপটপ ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে টাকার ভল্ট ভেঙে রক্ষিত টাকা লুণ্ঠনের করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভল্ট ভাঙতে না পারায় টাকা লুট করতে পারেনি।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ক্রাইম সিন পর্যালোচনা করে ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ল্যাপটপ ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভল্টের খোয়া যাওয়া দুইটি চাবি উদ্ধার এবং অভিযুক্ত বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ রইছ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আলাউদ্দিন চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিসুর রহমান, ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহাম্মদ এবং আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply